
ছাত্রের মৃত্যু
জড়িতদের বিচার দাবিতে উত্তাল বুয়েট
- আপলোড সময় : ২২-১২-২০২৪ ১০:৩৯:১৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-১২-২০২৪ ১০:৩৯:১৫ পূর্বাহ্ন


* অভিযুক্তদের আইনজীবী গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন
* সহপাঠী নিহতের দ্বিতীয় দিনেও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন শিক্ষার্থীদের
রাজধানীর ৩০০ ফুট সড়ক এলাকায় ব্যক্তিগত এক গাড়ির চাপায় এক সহপাঠী নিহত ও দুজন আহত হওয়ার ঘটনায় ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। এ দুর্ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে যে কোনো মূল্যে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বুয়েট ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এরআগে ৩০ মার্চ (সদ্য নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ) ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের প্রবেশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছিল বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ২৯ মার্চ বিকেলে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের মূল গেইট বন্ধ করে আন্দোলনে নামেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, আবারও ক্যাম্পাসে সক্রিয় হচ্ছে ছাত্র রাজনীতি। তাদের অভিযোগ, গেল ২৮ মার্চ রাত ২টার দিকে ক্যাম্পাসে বিশেষ শ্রেণির রাজনৈতিক নেতারা প্রবেশ করেন। ওই সময় বিপুল বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। এরপরই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নামেন তারা। এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করাসহ ৬ দফা দাবি তুলেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশে শঙ্কিত তারা। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কোনো প্রোগ্রাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘন। যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বুয়েটে রাতের আঁধারে প্রবেশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরে-বাংলা হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি অনুপ্রবেশের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২৮ মার্চ মধ্যরাতের ক্যাম্পাসে এমন অনুপ্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিমালার গুরুতর লঙ্ঘন এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক চর্চা। এমন নীতিমালা বহির্ভূত রাজনৈতিক চর্চায় মধ্যরাতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বী।
সংবাদ সম্মেলনে এক শিক্ষার্থী বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর রাতে বুয়েটে একটা প্রোগ্রাম চলার সময় আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী একত্রে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলাম। এমতাবস্থায় আনুমানিক রাত ৩টার পরে আমরা পূর্বাচল নীলা মার্কেটের সামনে ৩০০ ফিট রাস্তায় আমাদের তিন বন্ধু, বুয়েট সিএসই ব্যাচের ছাত্র মোহতাসিম মাসুদ, অমিত সাহা এবং মেহেদী হাসানের সড়ক দুর্ঘটনার কথা জানতে পারি। পরে তাদের মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে মোহতাসিম মাসুদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন অমিত ও মেহেদী। তিনি বলেন, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। বরং চালক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে আমাদের এক সহপাঠীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এবং দুজনকে গুরুতর আহত। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অভিযুক্তদের আইনজীবী গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে কিছু সংবাদমাধ্যমেও এই হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে অপপ্রচারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাই এবং দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই। তিনি বলেন, আমরা আগেও দেখেছি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যবৃন্দ কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, কোনো সিভিয়ার অফেন্সে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া থেকে তাদের নিস্তার লাভের দৃষ্টান্ত। আমরা এ ঘটনাও এমন আশংকা করছি। শুরু থেকেই মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানা এবং হত্যাকারীর পরিবারের বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা তথ্য নিউজমিডিয়ায় দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা আমাদেরকে শংকিত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে এই খুনের ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে, আমরা মাসুদ, অমিত, মেহেদির সহপাঠীরা তাদের সুবিচার প্রাপ্তির ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, সড়কের নিরাপত্তা আইন জোরদার করুন, দেশের বিচারব্যবস্থাকে একটি গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করুন। আর কোনো প্রাণ যেন এভাবে সড়কে কোনো মাতাল, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির হাতে না ঝড়ে, আর কোনো পরিবার যেন সন্তানকে না হারান, কোনো মায়ের কোল যেন আর খালি না হয়। এই ব্যাপারে দৃষ্টি প্রদানের দায়িত্ব সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সরকারেরও। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবি তুলো ধরা হয়। এগুলো হলো-যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ। আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদীপক্ষকে বহন করতে হবে। নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে।
তদন্ত কার্যক্রমে বাধাপ্রদানের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারো প্রাণ যেন না যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই ব্যাপারে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৩০০ফিট এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মুনতাসির মাসুদ নিহত হন। এছাড়া ঘটনায় আরও দুই শিক্ষার্থী আহত হন। আহতরা হলেন- বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের অমিত সাহা (২২) ও মেহেদী হাসান (২১)। মাসুদসহ তারা তিনজনই বুয়েটের সিএসই বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগের শিক্ষার্থী।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ